সময়ের প্রতিচ্ছবি রেখে যেতে চাই ------ কানিস রহমান

 

আমরা কি আসলে নিজেকে চিনি। আমরা কি আসলে নিজেকে বিশ্বাস করি। আমরা কি নিজেকে ভালবাসি। নিজের অজান্তে জীবন সাজাতে আমরা অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি। আসলে এটা কি ঠিক না বেঠিক সেটুকু বুঝতে চেষ্টা করছি কি! 

সময় বহতা নদীর মত, আপন মনে বয়ে চলে। তেমনি সময়ের স্রোতে অনাদিকালের হৃদয় জুড়ে জরিয়ে থাকা জীবনও চলে তার নিজের গতিতে। আমরা সে শ্রোতে শেওলার মত ভেসে বেড়াই। আমরা একজন আরএকজনকে আপন ভেবে জড়িয়ে ধরে নিজের কথাগুলো শেয়ার করি। কথায় বলে দুঃখের কথা শেয়ার করলে দুঃখ কমে। খুব সত্যি কথা। কিন্তু আমরা কি এখন সে সত্যযুগে আছি। আমরা কি সেই মানুষের সন্ধান পেয়েছি।  আসলে আমরা শুধুই সত্যিকারের মানুষের সন্ধান করে চলেছি। যদি কেউ পেয়ে থাকেন তারচেয়ে সৌভাগ্যবান এ পৃথিবীতে খুব কম আছে। আমরা আজকাল দেখি কথার কথামালা নিয়ে কথার বেসাতি করতে। সে এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে একজন শিল্পী তাঁর কন্ঠে তুলে নিয়ে বলেছেন "এই বাড়ি কথা লইয়া ঐবাড়িত লাগায়। সখিগ আমার মন বালা না।" আসলে এটা শুধু আমাদের গ্রাম গঞ্জের কাহিনি না। আমাদের প্রতিটি মানুষের জীবনের সাথে কমবেশি জরিয়ে গেছে। কথার কেনা বেচা আমাদের কাছে এখন কোন বিষয় না। ডিজিটালাইজেশন যেমন আমাদের বিশ্বটাকে একসূত্রে গাঁথার চেষ্টা করছে। ঠিক তেমনি আজ আমাদেরকে পরচর্চা আর পরশ্রীকাতরতায় অভ্যস্ত করে তুলছে। 

আর এজন্য আজ আমরা ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পরেছি। আমাদের কারই সময় নেই নিজেকে বা পরিবারকে সময় দেয়ার মত। আমরা একই ঘরে একই ছাদের নিচে চারদেয়ালে ঘেরা চিরিয়াখানার জন্তুর মত হয়ে যাচ্ছি কি না এখনই ভেবে দেখার দরকার। তা না হলে আজ থেকে কিছু দিন পর আমরা নিতান্তই একএকজন বিচ্ছিন্ন দ্বিপের বাসিন্দা হয়ে যাব আপন ঘরে। 

আজ আমরা কোন দিকে যাচ্ছি নিজেরা কি একটুও ভেবে দেখেছি। আজ আমাদের সমাজে মানুষ নিজগৃহে গৃহবন্দী।  তাই আমরা একে অপরের সহযোগিতায় ছুটে আসতে বা যেতে পারছি কি! আমরা নিজের ভালো চিন্তা করতে করতে কখন নিজের অজান্তে নিজেরই ক্ষতি করে ফেলেছি আমরা নিজেরাও জানিনা। তাইতো আজ বিচ্ছিন্ন মানুষগুলো কখন মরে পরে থাকে আমরা কেউ জানিনা। এমনকি তার পরিবারের লোকজনও জানেনা। জানাজানি হয় তখন যখন মানুষ অন্যান্য প্রাণীর মত মরে পচে গন্ধ বের হয়! এখন বলতে হয় সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র দিকে যাচ্ছে আমার দেশ। মানুষকে ভালো বাসতে গিয়ে মানুষ গুলো পশুর মতো মরে পরে থাকে। 

আমাদের চিরায়ত অস্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিশ বাষ্প ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে নর


ঘাতকের দল। আমরা যেখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলেমিশে একসাথে পথচলার মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠেছি সেখানে কিনা বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে বারবার। আমরা যেখানে সাদা কাল সব বর্ণের মানুষদের নিয়ে একটেবিলে খেতে পারি। একই পুকুরে স্নান করতে পারি। শীতের রাতে একই কাথায় আপন হৃদয়ে স্থান দিয়ে আগলে রাখতে পারি। অথচ তাবত বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রের মানুষগুলো এখনো সাদা কাল একসাথে বসে একই টেবিলে খাবার খেতে পারে না। বর্ণবৈষম্যের কারণে খুন হয়ে যেতে হয় অচেনা অজানা মানুষের হাতে। আমরা তো তাদের চেয়ে ভালো আছি। আমাদের এই ভালো থাকাতে যাদের অন্তর জ্বলে তারা বারবার আমার সুখের ঘরে আগুন জ্বালাতে আসে।

আমরা আর দাহন চাইনা, চাইনা আর বিচ্ছিন্ন হতে একে অপরের কাছ থেকে। আমরা চাইনা বিচ্ছিন্ন হতে পরিবার হতে। বিচ্ছিন্ন হতে চাইনা বন্ধু বান্ধব থেকে। আমরা আবার মিলেমিশে একসাথে গলা ছেড়ে গাইতে চাই "বাংলার নওজোয়ান হিন্দু মোসলেম মিলিয়া বাউলা গান আর মুরশিদি গাইতাম"। তাই বলতে চাই আমরা ব্যাক্তি পর্যায়ে নিজেদের সময় দিতে চেষ্টা করব।আমরা নিজেরা একটা নিদিষ্ট সময় নেট ব্যবহার করব। আমাদের জেন এই ভার্চুয়াল জগৎ একএকজন মানুষকে বিচ্ছিন্ন দ্বিপের বাসিন্দা না করে দেয়। আর একটা কথা বলতে চাই " প্রয়োজনে ব্যাক্তি পর্যায়ে নেটের ব্যাবহার একটা নিদিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। যাতে সারাদিনে একজন মানুষ এ কয়ঘন্টা ব্যাক্তিগত নেট ব্যবহার করতে পারবে।"

তারপরও আমরা সকলকে নিয়ে সকলের মাঝে মিলেমিশে একসাথে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। আমরা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমাদের সুন্দর একান্নবর্তী পরিবারের একটি প্রতিচ্ছবি রেখে যেতে চাই।

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم