পদ্মপাতার জল না শীলাতলে পদ্মপাতা --- কানিস রহমান



পদ্মপাতার জল দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। কিম্বা শীলাতলে পদ্মপাতা ধরার খুব ইচ্ছে হত। দুটো জিনিসের সাথে পদ্মর খুব মিল।তাই পদ্মকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। তাই নিজের অজান্তে মনের কোনে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছে গুলো আপন মনে হাতরে বেড়িয়েছি। কিন্তু কখনো নাগাল পাইনি। বাড়ি গ্রামে বললেও বাবু সাহেবদের বুঝতে কষ্ট হয়। তাই বলি অজপাড়াগাঁ। মেঠো পথ ধানক্ষেতে বাত্তর(আইল) ধরে ছুটে চলা দুরন্ত বালক ছিলাম কিনা জানিনা। তবে কথা না শুনা ছুটে বেড়ানো আর খেলাধুলায় মন পারে থাকত।খুব ভালো খেলোয়াড় ছিলাম। সেটা গেঁয়ো পথে কিম্বা বৃষ্টি হলে বইপত্র সার্ট দিয়ে বেধে ছোট বোনকে দুচার গা দিয়ে বাড়িতে পাঠয়ে দিয়ে রাস্তার পাশে কাদা বৃষ্টিতে। তবুও আমি রাজা ছিলাম আমার রাজার রাজত্বে। সেই রাজত্বে বহু পদ্নপাতা দেখেছি কিন্তু উপরে জল দেখিনি। সবসময় নিচে জল দেখেছি। আর শীলাতলে পদ্মপাতা ধরা হয়নি কখনো।


আমার ছেলেবেলার স্মৃতি গুলো কেমন যেন বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই বারবার তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে বিফল হয়ে যাই। তাই আজ বসেছি স্মৃতি রোমন্থন করতে। মন্থন করে যদি কিছু উদ্ধার করতে পারি। ছেলে বেলা হাতরে আমি কি পাচ্ছি। পাচ্ছি পড়া ফাঁকি দেয়া আর খেলাধুলার স্মৃতি। তাও ভালো আমাদের ছেলেবেলা আছে। ছেলেবেলার গল্প আছে। আছে কখনো কখনো নিজেকে হারিয়ে খুজে পাওয়ার গল্প। কিন্তু আমরা যে আগামী প্রজন্ম তৈরি করছি তাদের কি ছেলেবেলা থাকবে! থাকবে নিজেকে হারিয়ে খুজে পাওয়ার গল্প। তারা ডিজিটাল বিশ্বের বৈশ্বিক সন্তান হচ্ছে। তাদের চিন্তা চেতনা শানিত হচ্ছে না ভোতা হচ্ছে সময় বলে দিবে। তবে তারা আত্মাকেন্দ্রীক হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই আজ মনের কথা খুলে বলার মত বন্ধু নেই। কিম্বা মন খুলে কথা বলার সময় নেই। তাইতো আজ তারা কারো বন্ধু নয়। আজ তারা হয়ে যাচ্ছে ভার্চুয়াল জগতের একটকজন প্রাণী।

আমি আবার ফিরে যেতে চাই  আমার ছেলে বেলায়। আমি মনোযোগী ছাত্র নই। ফাকিদিয়ে চলায় অভ্যস্ত। কিন্তু সময়তো আর আমার জন্য থেমে থাকেনি। তাই বহমান সময়ের স্রোতে পরীক্ষার হলে আসন নিতে হয়। তেমনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র। পরীক্ষা সম্ভবত বাংলা ছিল। বহু প্রশ্নের মধ্যে গরু রচনা আসছে। আমাদের সময় গরু রচনা পড়েনি বা লেখেনি এমন ছাত্র ছাত্রী পাওয়া মনে হয় দূরহো কাজ। যাই হোক কি করব। লিখতে তো হবে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পর রচনা লিখতে হবে। এটা যেমন আব্বার নির্দেশ তেমনি শিক্ষকদেরও নির্দেশ। তো সেমত সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পর কি রচনা লিখব ভাবছি। একটাও পড়ে আসা হয়নি। মুখস্থ বহু পরের কথা। দু'একবার দেখেছি। যাক কিছু তো লিখতে হবে। ভাবছি আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। এর মধ্যে স্যার এসে কয়েকবার সাবধান করে দিয়ে গেছেন। জিজ্ঞেস করেছেন কি সমস্যা? বললাম স্যার রচনা কমন পরেনি। তাকাতে তাকাতে হঠাৎ আমার লেখায় গতি আসল। স্যার বিষয়টা খেয়াল করল। আমি বারবার ডানদিকে তাকাচ্ছি আর লিখছি। আমার ডানে কেউ নেই যে আমি দেখব। আমি কি আকাশ দেখছি না পাতাল দেখছি। আমার স্যারের দিকে কোন মনোযোগ নেই। আমি ডানদিকে তাকাচ্ছি আর লিখছি। এবার স্যার আমার পিছনে দাঁড়িয়ে দেখছে আমি কি করছি বুঝার জন্য। আমার সে দিকে খেয়াল নেই। আমি দেখা আর লেখায় ব্যাস্ত। হঠাৎ ধরাম করে এক বিল আমার পিঠে। আমি ওমাগো বলে চিৎকার করে উঠলাম। দেখি কিল দিয়ে স্যার আমার কান ধরে আছে। কিলের চোটে স্যার কখন আমার  কান ধরেছে আমি বুঝতে পারিনি। আর চোখ লাল করে বলছে নকল করা হচ্ছে। আমিতো আকাশ থেকে পরলাম। আমার বাপের জন্মে কেউ নকল করেছে কিনা আমি জানিনা। কিন্তু একর্মটি আমি কখনো করিনি। তাহলে স্যার বলছে কেন। ক্লাসের সবাই চুপচাপ ঘটনা দর্শন করছে। এদিকে আমার মানইজ্জত শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্যার বলল কি রচনা লিখছিস। বললাম স্যার গরুর রচনা। এবার স্যার বলল যা লিখেছিস বল। আমি গুলি করলেও বলতে পারব না। আমার মুখ পানশে। কি বলব বুঝতে পারছি না। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। স্যার এবার চেচিয়ে উঠলো। নকল করা হচ্ছে। দেখে দেখে লেখা হচ্ছে। আমি বললাম সাহস নিয়ে স্যার আমি নকল করিনি। স্যার রেগে গিয়ে বলল তো কি করেছিস। বাহিরে তাকিয়ে তাকিয়ে কি করছিস। এবার সাহস করে বললাম স্যার গরুর রচনা লিখছি গরু দেখে দেখে। ক্লাসের সবাই জোরে হেসে উঠল। স্যার বলল এটাকে কি বলে।বাড়িতে পড়ালেখায় মন নেই ভবগন্ডা এখন গরু দেখে নকল করা হচ্ছে। একথা বলে জানালা লাগিয়ে দিয়ে স্যার চলে গেল। কাগজের নকল নেই কিন্তু চোখের নকলই আমার জীবনের স্মৃতির পাতায় অম্লান হয়ে রইল।

এই ছোট ছোট ছেলেবেলার গল্প বা স্মৃতি যখন মনের কোনে লুকিয়ে রইল। তখন পদ্মপাতার জল বা শীলাতলে পদ্মপাতা ধরার কথাও মনে থাকার কথা। হয়তো মনে আছে হয়ত নেই।  অথৈজলে ঝাপ দিয়ে খুঁজে ফিরি দেখি পাই কিনা। তাই আমরা সকলে মিলে আমাদের সন্তানদের জন্য স্মৃতির জায়গাটুকু তৈরি করার চেষ্টা করি। 


(চলমান)

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post