বাংলা চলচ্চিত্রে নায়ক মান্নাকে সৃষ্টি করেন কাজী হায়াত

বিনোদন রিপোর্টার#



নায়ক মান্না জনপ্রিয় হওয়া পেছনে পরিচালক কাজী হায়াতের অবদান চিরস্মরণীয়। কাজী হায়াৎ এবং মান্না বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক নায়ক- পরিচালক জুটি । এই জুটি অসংখ্য সুপার হিট ছবি উপহার দিয়েছে আমাদের। 

১৯৮৫ সালে পাগলী ছবি থেকে মান্না এবং কাজী হায়াতের জুটির সৃষ্টি হয়।পাগলী ছবিতে মান্না ছিলেন সহ অভিনেতা।১৯৮৮ সালে কাজী হায়াত প্রথম মান্নাকে একক নায়কের সুযোগ দেন যন্ত্রণা ছবিতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই ছবিটি ভালো ব্যবসা করতে পারেনি যদিও মান্নার অভিনয় ছিল অসাধারণ। এরপর ৯২ সালে দাঙ্গা এবং ত্রাস ছবির মাধ্যমে এই জুটি সফলতা অর্জন করেন। মান্নাও ধীরে ধীরে ব্যস্ত নায়কে পরিনত হন। ৯৪ সালে সিপাহী এবং দেশ প্রেমিক মুক্তি পায় এই জুটির।হঠাৎ করে এই জুটির মধ্যে ভাঙন ধরে। কোন কারণে মান্নার উপর বিরক্ত ছিলেন তাই মান্না কে বাদ দিয়ে আরেকটা মান্না তৈরির পরিকল্পনা করেন। 

৯৫ সালে পল্লব নামের একজন নতুন মুখ নিয়ে নির্মাণ করেন লাভ স্টোরি নাম ছবি। এই ছবি সুপার ফ্লপ হওয়ায় কাজী হায়াৎ এর প্রথম মিশন ব্যর্থ হয়। এরপর প্রয়াত সালমান শাহ কে নিয়ে কাজী হায়াৎ  দেশদ্রোহী ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। কোন কারণে সালমান শাহ না নিয়ে আবারও মান্না কে নিয়েই দেশদ্রোহী ছবির শুটিং  শেষ করেন ৯৬ সালে। কিছু রাজনৈতিক বক্তব্যের কারণে ছবিটি দীর্ঘ দিন সেন্সর বোর্ডে আটকে রাখে।পরবর্তী তে ৯৭ সাল দেশদ্রোহী মুক্তি পায় এবং ছবি টি সুপার ডুপার হিট হয়।ততদিনে মান্না ঢালিউডের সব চেয়ে ব্যস্ত নায়কে পরিনত হন।কাজী হায়াৎ আবারও মান্নার উপর বিরক্ত। ৯৭ সালে মান্না কে বাদ নির্মাণ করেন পাগলা বাবুল নামের আরেকটি  ছবি। এই ছবি তে ঠিক মান্নার মতো করে চুলের কাটিং এবং গেটাপ দিয়ে মাসুদ শেখ নামের একজন  কে পর্দায় হাজির করেন। এই ছবিটিও তেমন ব্যবসা করতে পারে নি। কাজী হায়াৎ মান্নার মধ্যে মান অভিমানের মধ্যেই নির্মিত হয় তেজি। এই সিনেমায় যুক্ত হয় ডিপজল নামের নতুন ভিলেন। ব্যতিক্রম সংলাপ ও বাচনভঙ্গি ধারন করায় ডিপজলকে দর্শক গ্রহণ করে। এরপর কাজী হায়াত মান্না ও ডিপজলকে নিয়ে একে একে আম্মাজান,কষ্ট, ধর, ঝড়,অংক ছবি গুলো নির্মিত হয়েছিল ৯৮,৯৯ সালের দিকে।এরপর মান্নাকে নিয়ে বিভিন্ন পরিচালক ছবি বানাতে থাকে,  মান্না তখন এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যে মান্নার সিডিউল পাওয়া সোনার হরিণের মতো। মান্নার সিডিউল না পেয়ে কাজী হায়াৎ আবার কামাল খান নামের নতুন মুখ নিয়ে নির্মাণ করেন জখম এবং ক্রোধ নামে দুটি ছবি ২০০০ সালে। এই ছবিতেও কামাল খান কে মান্নার মতো ড্রেসআপ এবং গেটআপ দিয়েই পর্দায় হাজির করেন কাজী হায়াৎ।  প্রথম ছবি টি মোটামুটি ব্যবসা করলেও পরের ছবি টি তেমন ব্যবসা করতে পারে নি। ফলে কামাল খানও আর মান্নার বিকল্প হতে পারে নি।  

কাজী হায়াত এর শেষ মিশন ২০০২ সাল। মান্নার উপর এতোটাই ক্ষিপ্ত হন কাজী হায়াৎ মধ্য রাতে নিজের ছেলে কাজী মারুফ কে ঘুম থেকে তুলে নায়ক নায়ক বানানোর পরিকল্পনা করেন। এবং সেই বছরই মারুফ কে দিয়ে নির্মাণ করেন ইতিহাস ছবি। সেই ছবি সুপার হিট হয় এরপর মান্না কাজী হায়াৎ জুটি অনেকটা ভেঙে যায়। এরপর থেকে মান্না কাজী হায়াৎ জুটি তেমন একটা দেখা যায় নি। কাজী হায়াৎ এর সব চেয়ে প্রিয় শিষ্য ছিলেন মান্না তারপর মান্নার বিকল্প চার চারজন নায়ক কে তিনি চলচিত্রে এনেছেন শুধু মাত্র মান্না কে দেখানোর জন্য।  চার জনের মধ্যে একজনও মান্নার বিকল্প হতে পারে নাই। 

এররকম আরো অনেক পরিচালক মান্নার উপর বিরক্ত ছিলেন শুধু মাত্র মান্নার সিডিউল ঠিক মতো না পেয়ে। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে এনায়েত করিম, নাদিম মাহমুদ এবং ডিপজল।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post