হোমায়রা আক্তার#
"ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়"এটি একটি প্রবাদ বাক্য। আমরা বিভিন্ন ভালো কাজের মাধ্যমে এই প্রবাদ বাক্যটিকে বাস্তবে কাজে লাগাতে পারি।
আমরা বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। আমাদের বাংলাদেশকে সবদিক থেকে যদি স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই তাহলে দেশের সকল স্তরের শিশুদেরকে সঠিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য সকলের সহযোগীতা খুবই প্রয়োজন।
একজন সুবিধা বঞ্চিত শিশুর গল্প বলছি,আসলে বাস্তব কথা। শিশুটি রেললাইনের ধারে বিড়ালদের সাথে বসবাস করে। শিশুটির নিকট শুনলাম ওর মা মারা গিয়েছে। বাবা বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। ওকে দেখশোনার করার কেউ নেই। আত্মীয়-স্বজনরাও কেউ খোঁজ নেয় না। তাই ও রেললাইনের ধারে, বিড়ালদের সঙ্গী করে থাকে।
সারাদিন কাগজ কুড়ায়,সেগুলো বিক্রি করে নিজ কিছু খায় আর বিড়ালদের খাওয়ায়। ছেলেটি বলে আমারতো পরিবার নেই তাই বিড়ালগুলোই আমার পরিবার। শিশুটির মা বেঁচে থাকলে হয়তো এতটা ভোগান্তি পোহাতে হতো না। অথচ আমরা দেখি এই সমাজে যাদের সন্তান না হয়, সেই মায়েদের অনেক কথা শুনতে হয়। আর মায়ের মৃত্যুর পর বাবাও পর হয়ে যায়।
তারপর একদিন জানতে পারলাম এক নিঃসন্তান দম্পতি ছেলেটিকে তাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে। তার লেখাপড়া ও তাকে লালন পালনের দায়িত্ব নিয়েছে ।খবরটা শুনে মনটা আনন্দে ভরে গেলো। তাকে তাদের সন্তানের মতো লালন পালন করে, সমাজে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে, একদিকে যেমন তাদের সন্তানের অভাব পূরণ হবে অন্যদিকে ছেলেটি সমাজে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। একটা শিশু সুন্দর ভাবে সমাজে বেড়ে উঠার সু্যোগ পাবে। আমাদের সমাজে এইরকম অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত শিশু রয়েছে, আমরা যদি সামর্থ্যবান লোকজন তাদেরকে ভালোবেসে কাছে টেনে নেই। তাদের প্রতি একটু যত্নশীল হই, আমাদের একজন সন্তানের মতো ভেবে তাদেরকে ভালোবাসা দিয়ে সমাজে ভালো একটা অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের সমাজ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
এইরকম বিভিন্ন কারনে আমাদের দেশে অনেক শিশুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের মানসিক বিকাশ ব্যহত হচ্ছে। তারা জীবন বাঁচানোর তাগিদে নানারকম খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ছে।তাই সময় থাকতে এই সকল শিশুদের প্রতি আমাদের যত্নশীল হতে হবে।
আমাদের দেশের অনেক লোক ভূমিহীন, তাদের বেঁচে থাকার জন্য মাথা গোজার ঠাঁই নেই। আমাদের দেশের সকল বিত্তশালী লোকজন যদি এলাকাভিত্তিক কিছু কিছু বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে, তাহলে আমাদের দেশের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাথা গোজার ঠাঁই হবে। সরকারের একার পক্ষে সকল শ্রেনীর লোকদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা সম্ভব নয়।তাই সমাজের বিত্তবান লোকজন যদি আমাদের দেশের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হয় এবং তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে তাদের সঠিক ভাবে বেড়ে উঠা অনেক সহজ হবে।
সমাজের অনেক বিত্তশালী লোক রয়েছে , যারা তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত অর্থ বিভিন্নভাবে ব্যয় করে থাকেন।সেই অর্থ থেকে এক ভাগ যদি আমাদের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরর জন্য ব্যয় করা হয়, তাহলে এদেশে সুবিধাবঞ্চিত বলতে কোন শিশু থাকবে না।
প্রচণ্ড শীতে আমরা যদি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কথা একটু চিন্তা করে তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল আচরণ করে, তাদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে তাদের শীত নিবারণ করা সহজ হবে। আমাদের সমাজে কিছু লোক রয়েছে তারা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের কথা না ভেবে নিজের লাভের আশায় অসহায় মানুষদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের বিভিন্ন খারাপ কাজে লিপ্ত করে। তাই আমাদের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষায় শিক্ষিত করে,সমাজে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে এদেশ আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পারবে।
তাই আমরা যদি আমাদের বিবেককে কাজ লাগিয়ে যে যেখানে আছি, তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের দেশের সকল সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের দিকে একটু সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে সমাজে একজন প্রতিষ্ঠিত ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি,তাহলে আমরা সামাজিক নিরাপত্তাসহ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আরও এগিয়ে যেতে পারবো বলে আশা করতে পারি।
তাই সমাজের সকল স্তরের লোকদের নিকট বিনীত অনুরোধ রইল, পারিবারিক কোন সমস্যা যেন আমাদের শিশুদের সুন্দর জীবন গঠনকে বাধাগ্রস্ত না করে।আমাদের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাকে জাগ্রত করে, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।
লেখক: সহকারি শিক্ষক
লতিফপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কালিয়াকৈর,গাজীপুর ।