বিজয়ের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধু ------ প্রীতি কর্মকার


১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সশস্ত্র  স্বাধীনতাযুদ্ধ ক্রমান্বয়ীক গণতান্ত্রিক  রাজনৈতিক  প্রক্রিয়ার সুবর্ণ ফলশ্রুতি। সেই  কারণে, ১৯৩৬,১৯৪৬,১৯৫৪,১৯৬৪ ও সর্বোপরি  ১৯৭০ সালের  সাধারণ  নির্বাচন ও জনগণ কর্তৃক  তাঁদের  রাজনৈতিক  অভিপ্রায় জ্ঞাপনের মাধ্যমে  উত্তর কালে  স্বাধীনতা যুদ্ধের. নৈতিক  শক্তি  নিহিত  হয়েছিল। ব্যক্তি ও দলের  বিশেষ  অবদান  থাকলেও  জনগণের  মৌলিক  অভিপ্রায়  ও লোকশক্তি ছিল  প্রবল। বর্তমান  বাংলাদেশের  ভৌগোলিক  অবস্থান ও রাজনৈতিক  অস্তিত্বের  সূচনা  হয় এই শতাব্দীর  প্রারম্ভে নবাব সলিমুল্লাহ  কর্তৃক  এতদঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় অধ্যুষিত একটি পৃথক প্রদেশ গঠনের  দাবির মাধ্যমে।পরে  এই অঞ্চল  একটি আলাদা  সার্বভৌম  আবাসভূমি করার প্রস্তাব দেয়  আবুল  কাসেম ফজলুল  হক।ব্রিটিশ শাসন অবসানের  প্রাক্কালে হোসেন  শহীদ  সোহরাওয়ার্দী অখণ্ড  বাংলাকে সার্বভৌম  বাংলা  করার চেষ্টা  করেন। স্বায়ত্তশাসনের  দাবি  অগ্রাহ্য হওয়ায়  মাওলানা ভাসানী ১৯৫৬ সালে  কাগমারী  সন্মেলন  করেন। 
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ছয়দফা  আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৭০ সালের  সাধারণ নির্বাচনের পর স্বাধিকার আন্দোলনে ও স্বাধীনতাযুদ্ধ  পর্যবসিত হয়।১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট  থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই দেশের  রাজনৈতিক পরিক্রমায় যে ক্রান্তিলগ্ন এসেছিল ১৯৭১ সালের নজিরবিহীন  রক্তক্ষয়ী  সশস্ত্র স্বাধীনতাযুদ্ধে। ধর্ম ভিত্তিক  সাম্প্রদায়িকতা থেকে  ভূখন্ডে  ভিত্তিক  জাতীয়তার  যে ঐতিহাসিক  রুপান্তর ঘটে ছিল  তার প্রধান মধ্যে মণি ছিল  শেখ মুজিবুর  রহমান। ঐতিহাসিক  দৃষ্টিকোণ  থেকে  মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল  নেহেরু, মোহাম্মদ আলী, কায়েদইআজম,আলী জিন্নাহ,চিত্তরঞ্জন দাস,সুভাষ বসু,শেরে-বাংলা  ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী  সবার উত্তরসূরী ছিলো বঙ্গবন্ধু  শেখমুজিবুর  রহমান। আইয়ুব  খানের পতনে বেসিক ডেমোক্রেসি পরিত্যক্ত হয়। প্রত্যক্ষ নির্বাচনে যে সাধারণ  নির্বাচন হয় আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা  লাভ করে। শেখ  মুজিবের  বজ্রকন্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল পাকিস্তান  নয়, চাই  বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা। ইতিহাসের  সন্ধিক্ষণে  যে ব্যক্তি ১২বছরজেলে,৯বার কারারুদ্ধ  হয়েছেন,১৮টি ফৌজদারী মামলা, ২বার ফাঁসির মঞ্চ হতে ফিরে  আসেন জীবনের  শেষ  অংকে ইতিহাস  কথা  বলে। দলীয়  ব্যক্তি থেকে জাতীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিল এবং  রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বে বিলীন  হয়ে  যান।
 
১৯৪৭সালের১৫ই আগষ্ট থেকে ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের  অস্তিত্বের  প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধু  নিবিড়  ভাবে  জড়িত ছিল। আর জয় বাংলা  ধ্বনিতে মন্ত্র  শক্তিতে উদ্যমিত ছিলেন। যার অর্থ বাংলা ভাষা, বাংলা দেশ ও বাঙালী  জাতির  জয়। অথচ জয় বাংলা ধ্বনি  আমরা  আওয়ামীলীগ বুঝি। একটি  সার্বজনীন  স্লোগান  কে ব্যক্তি স্বার্থে  বিভক্ত  করা হয়। বঙ্গবন্ধুর  ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব এদেশ নয়,পৃথিবীর  যেকোনো  দেশের ইতিহাসে কালের  স্বাক্ষী হয়ে থাকবে। উনার  অবদানে অবশেষে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে উদ্ভাসিত  হয়েছিল  বিজয়,দীর্ঘ  নয় মাস সশস্ত্র  সংগ্রামের অবসান ঘটে ছিল। বঙ্গবন্ধু  বেঁচে  আছেন  বাঙালির  সত্তায়,লাল সবুজের  পতাকায়, বিজয়ের  গৌরব  ইতিহাসের  স্মৃতি  কথায়। (লেখক ও কবি)
 
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post